পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) একাডেমিক কাউন্সিলের ৫৪তম সভায় দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অবসান ঘটিয়ে গৃহীত হলো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কম্বাইন্ড ডিগ্রি “BSc. Veterinary Science and Animal Husbandry (BSc. Vet Sc. & AH)” যা ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম দুটি পৃথক ডিসিপ্লিনকে একত্রিত করল।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর ও একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। সভা সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. ইখতিয়ার উদ্দিন। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান, ট্রেজারার প্রফেসর মো. আবদুল লতিফ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জি. এম. আতিকুর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান খান এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নাসরিন সুলতানা লাকী প্রমুখ।
আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়—এএনএসভিএম অনুষদের অধীনে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) এবং অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (BSc. AH Hons) এই দুটি পৃথক ডিগ্রিকে সমন্বিত করে নতুন কম্বাইন্ড ডিগ্রি BSc. Vet Sc. & AH চালু করা হবে।
১৯৬২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু হয়েছিল এই কম্বাইন্ড ডিগ্রি। পরবর্তীতে তা বিভক্ত করে আলাদা দুটি ডিগ্রি (DVM ও BSc. AH Hons) করা হয়। দীর্ঘ ৬৩ বছর পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে পবিপ্রবিতে পুনরায় চালু হলো এ ডিগ্রি।
সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ে। টিএসসির সামনে রূপ নেয় উৎসবমুখর পরিবেশে। শিক্ষার্থীরা ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলামকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান, অনেকে আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
সভাশেষে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্যে ভিসি প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আজকের এই সিদ্ধান্ত কেবল একাডেমিক নীতি নয়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। আমি বিশ্বাস করি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমঞ্চে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। এটি শুধু পবিপ্রবির নয়, বরং বাংলাদেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণার ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু ডিগ্রিধারী নয়, তারা হবে গবেষণা, জ্ঞানচর্চা ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত কর্মী। কর্মক্ষেত্রে নতুন দরজা খুলবে, প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আজকের এই সাফল্য প্রমাণ করে—সংগঠিত দাবি, ইতিবাচক আন্দোলন ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো পরিবর্তন সম্ভব।”
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণকারী অতিথিদের মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, খামারিরা আরও উপকৃত হবেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েটদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হবে।